বর্তমানে কমবেশি সবাই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত। তাই অনলাইন ইনকাম করার চিন্তা করে থাকেন প্রায় সবাই। কিন্তু অনলাইনে ইনকাম করার উপায় জানা না থাকায় ইন্টারনেট সুবিধা থাকলেও আয়ের পথ খুঁজে পান না বেশিরভাগ মানুষই। অনলাইনে কাজের অভাব নেই – এই তথ্যটি কিন্তু একদিক দিয়ে সত্যই বলা চলে। আমাদের দেশের অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকার পরও শুধুমাত্র দরকারী তথ্যের অভাবে অনলাইনে ইনকাম করতে পারেনা।
চলুন জেনে নেওয়া যাক অনলাইন ইনকাম করার সেরা ১০টি কার্যকরী উপায় সম্পর্কে। আশা করি এগুলো থেকে আপনি আপনার পছন্দের অনলাইন আয়ের পথ খুঁজে পাবেন এবং স্বাবলম্বী হবেন।
কিভাবে আপনি অনলাইনে ইনকাম করবেন? (How to Online Income)
বাংলাদেশে অনলাইন ইনকাম এর বিষয়টি আমাদের নতুন সমাজের কাছে নতুন একটি বিষয় হলেও এটি কিন্তু সারা পৃথিবীতে শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। সত্যি কথা বলতে ঘরে বসে স্বাধীনভাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার এ সুযোগ কিন্তু খুব কম পেশায় পাওয়া যায়।
তাছাড়াও অনলাইন ইনকাম (How to Online Income) এর জন্য আপনার বিশেষ কিছুই প্রয়োজন হবে না। আপনার মেধা কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজেই কোনো কাজে দক্ষ হয়ে সেটা থেকে নিয়মিত ইনকাম করতে পারেন।
আপনি ছেলে মেয়ে, ছাত্র, চাকরিজীবী যাই হন না কেন, আপনি এই সেক্টর থেকে আয় করতে পারবেন। আপনি একজন ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে আপনার পড়ালেখার খরচ যদি আপনি নিজেই জোগাড় করতে পারেন, তাহলে কি সেটা মন্দ হবে?
প্রতিদিন অনেক সময় তো ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইত্যাদিতে ব্যায় করেন। চাইলে এই সময় গুলো শুধু চ্যাটিং আর নিউজফিড ঘুটে নষ্ট না করে এখান থেকেও আয় করা সম্ভব।
এছাড়া পড়া লেখার ফাকে ফাকে বা অবসর সময়ে যদি এই কাজগুলো করেন তাহলে দেখবেন সময়ও নষ্ট হচ্ছেনা এবং পাশাপাশি কোনো খারাপ দিকে মনও যাচ্ছেনা।
আর আপনি যখন নিজের খরচ নিজেই জোগাড় করবেন, তখন দেখবেন আপনার নিজের ভেতরে অন্যরকম একটা সন্তুষ্টি কাজ করছে; অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে।
তাই অবশ্যই আপনি চেষ্টা এই কাজের ভেতরে ঢুকে পড়ার। কিছু লাগবেনা অনলাইন ইনকাম (How to Online Income) শুরু করতে আপনার।
শুধু একটি ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট সংযোগ এবং কাজ করার ইচ্ছা। কিভাবে কি করবেন তার বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।
১। ফ্রিলান্সিং (Freelancing) করে আয়
অনলাইনে যে পদ্ধতিতে সবথেকে বেশি মানুষ রোজগার করে সেটি হলো ফ্রিলান্সিং। বাংলদেশের বেকারত্ব কমাতে এই খাতটি অনেক বড় ভুমিকা পালন করছে এবং সাথে সাথে অনেক দক্ষ মানুষ এই খাতে কাজ করে আমাদের দেশকে রিপ্রেসেন্ট করছে ।
পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরছে। আসলে বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের মানুষের জানতোই না যে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ বলে একটা দেশ আছে। সেসব মানুষের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করছে আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সারগণ।
সাথে সাথে প্রতি মাসে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স তারা এনে দিচ্ছে বাংলাদেশে। তাই এই ফ্রিলান্সিং এ যোগদান করে আপনি টাকা আয় করার পাশাপাশি এই গৌরবেরও অংশীদার হতে পারবেন।
এখন আসি কিভাবে শুরু করবেন এই কাজ। ফ্রিলান্সিং বলতে মুলত বিভিন্ন ধরনের কাজ যে কাজে আপনি দক্ষ সে কাজটি একটি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক এর বিনিময়ে করে দেয়া।
এখানে আপনার কাজ করার এবং আপনার যে ইমপ্লয়ার (Employer) তার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নাই। আপনি ঘরে বসেই আপনার কাজ সম্পাদন করতে পারবেন এবং আপনার ক্লায়েন্ট হবে বিভিন্ন দেশের। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে থাকবে।
যাহোক, সবার প্রথমে এখানে আপনার দরকার একটি নির্দিষ্ট বিষয় দক্ষতা। এটা হতে পারে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং (Graphics Design), হতে পারে ফটো এডিটিং (Photo Editing), হতে পারে ওয়েব ডিজাইনিং (Web Design), ওয়েব সাইট মেকিং (Website Making), কপি রাইটিং (Copywriting), কন্টেন্ট রাইটিং (Content Writing), লোগো ডিজাইন (Logo Design), ইত্যাদি।
এসবের যেকোনো একটি কাজে আপনি দক্ষতা অর্জন করতে পারলেই আপনি ফ্রিলাঞ্চিং করতে পারবেন। আপনি যদি একাধিক কাজ পারেন সেক্ষেত্রে আপনার টাকা ইনকামের সুযোগ বেশি হয়ে যায়।
কাজ শেখার পর আপনাকে বিভিন্ন ফ্রিলান্সিং সাইটে (যেমন- Freelancer, Upwork, Fiver, ইত্যাদি) আপনার তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এর পরে আপনি কোন কোন কাজে পারদর্শী সেগুলো ওই সাইটে মেনশন করে দিতে হবে।
তবে একটা বিষয় আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। বর্তমান সময়ে অনলাইন ইনকাম সাইট অনেক আছে। কিন্তু সঠিক ও ভালো মানের সাইট খুব একটা নেই।
তাই যেকোনো ওয়েবসাইটে কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই ভালো ভাবে সাইটটি দেখে নিবেন। যদি সব কিছু দেখে আপনার কাছে ভালো বলে মনে হয় কেবল তাহলেই আপনি সেই সাইটে কাজ করা শুরু করবেন।
তারপর, আপনি যে কাজ পারেন তার প্রমানের জন্য আপনার পূর্বেই সম্পাদিত কোনো কাজ থাকলে সেটা পোর্টফোলিও আকারে ওই ওয়েবসাইটে সাজিয়ে রাখতে হবে। এতে করে আপনার ক্লায়েন্ট এসে আপনার পোর্টফলিও দেখে পছন্দ করলে আপনাকে কাজে নিয়োজিত করবে।
এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ থাকবে অবশ্যই ভালো একটা পোর্টফলিও তৈরি করার জন্য কারন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন হিসাবে ওই পোর্টফোলিও গুলোই আপনাকে কাজ পেতে সহায়তা করবে।
প্রথম প্রথম আপনাকে কাজ পেতে একটি অসুবিধা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার পরিচিত কেও যদি ফ্রিলান্সার থাকে তার রেফারেন্স নিতে পারেন।
এই রেফারেন্স এর মাধ্যমে কাজ পেয়ে আপনার প্রথম ক্লায়েন্ট যখন আপনাকে ভালো একটা রিভিউ দিবে, তখন দেখবেন কাজ আসতেই থাকবে।
এছাড়াও প্রথমে গিয়ে বিভিন্ন কন্টেস্টে অংশগ্রহন করতে পারেন। ওখান থেকেও ক্লায়েন্ট পেতে পারেন। আমাদের মতে ফ্রিলান্সিং এর ক্ষেত্রে প্রথম কাজটা পাওয়াই একটু কঠিন।
২। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আয়
বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক(Facebook), টুইটার(twitter), ইনস্টাগ্রাম( instagram), স্ন্যাপচ্যাট(snapchat) প্রচুর ব্যাবহার হচ্ছে। তবে এ গুলো শুধু চ্যাটিং এর জন্য নয় বা সময় অপচয় এর জন্য নয়। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
এজন্য আপনার ফেসবুক পেজে প্রচুর পরিমানে ফলোয়ার থাকতে হবে। এতে আপনি ঘরে বসে খুব সহজে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন কোম্পানির কাছ থেকে ফেসবুকে টাকা আয় করতে পারবেন।
কারণ যেকোন কোম্পানির পন্যের প্রচারের জন্য স্যোশাল প্লাটফর্ম খুবই জনপ্রিয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যান-ফলোয়ার তৈরিসহ তাঁদের ধরে রাখতে প্রচুর ধৈর্য থাকাটা জরুরি।
৩। ব্লগিং (Blogging) করে আয়
ব্লগিং অনলাইন আয়ের বেশ পুরাতন কিন্তু অনেক কার্যকরী একটা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বেশ ভালো অঙ্কের একটা টাকা প্রতি মাসেই ইনকাম করা সম্ভব।
এটি মূলত একটি ডিজিটাল নিউজ পেপার এর মতো। আপনি আপনার মন মতো কোনো একটি বিষয় নিয়ে লিখবেন। যার ওই বিষয়টি জানার দরকার সে এসে পড়ে যাবে।
আপনি এখন যে লেখাটি পড়ছেন এটিও একটি ব্লগ। অতএব বুঝতেই পারছেন বিষয়টা। লেখালেখি যদি আপনার আগ্রহ থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই এখান থেকে ইনকাম করতে পারেন।
আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ, জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা বেশি সে বিষয়ে ব্লগিং করলে তা সবথেকে বেশি কাজে দেয়।
তাই আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সেই নিশেই (niche) কাজ করতে পারেন। নিশ(niche) বলতে মূলত নির্দিষ্ট কিছু বিভাগ বোঝায় যেমন, খেলাধুলা, টেকনোলজি, আইন, রান্না, জীবনী, ভ্রমন, ইত্যাদি। উদাহরণ স্বরূপ ভ্রমনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো এক জায়গায় ভ্রমনে গিয়ে কি কি অভিজ্ঞতা হয়েছিলো সেটি নিয়ে একটি বিস্তারিত ব্লগ লিখে ফেলতে পারেন।
এখন মূল বিষয় হলো আপনি কোথায় লেখা লিখি করবেন। এক্ষেত্রে সব থেকে ভালো হয় আপনি যদি একটি ব্লগ সাইট নিজে বানিয়ে নিতে পারেন। এখন অনেক সহজে কোনো খরচ ছাড়াই ব্লগ সাইট বানানো যায়। তবে ফ্রি সাইটগুলো কে মানুষ একটি কম বিশ্বাস করে।
তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে প্রথমে কিছু টাকা খরচ করে ডোমেন কিনে হোস্টিং ঠিক করে আকর্ষণীয় একটি সাইট তৈরি করুন। এরপর ওখানে লেখা লেখি শুরু করুন। দেখবেন বেশ ভালো ফল পাচ্ছেন।
একটি ডট কম ডোমেন কিনবেন সাথে এক জিবি হোস্টিং এবং একটি ফ্রি থিম। এই তিনটা জিনিসই আপনার ব্লগিং শুরু করার জন্য যথেষ্ট। এক্ষেত্রে আপনার তিন হাজার টাকা মতো খরচ হতে পারে।
এইভাবে খরচ করে ব্লগিং করলে আপনার ব্র্যান্ডিং টা ভালো হবে এবং ইনকাম এর পরিমানও অনেক বেশি হবে ফি সাইটের তুলনায়। আর ভবিষ্যতে আপনার সাইট এর দামও অনেক হবে। ক্ষেত্র বিশেষে একটি ভালো সাইটের মূল্য কয়েক লক্ষ্য পর্যন্ত হয়ে যায়।
আর ফ্রি সাইট গুলোর ক্ষেত্রে আপনাকে পুরো ডোমেইন দিবে না গুগোল। আপনি সেক্ষেত্রে পাবেন সাব ডোমেইন। এভাবে ব্লগ সাইট খোলার ক্ষেত্রে আপনি খুব সহজেই ব্লগস্পট দিয়ে ১০ মিনিটেই একটি ব্লগসাইট খুলতে পারেন।
আর এক্ষেত্রে আপনি মোবাইল এবং কম্পিউটার উভয় মাধ্যমেই কাজ করতে পারেন। তাই যারা মোবাইলে অনলাইন ইনকামের কথা ভাবছেন, তাদের জন্যও এটি একটি সেরা সুযোগ হতে পারে।
তবে এতো কিছুর পাশাপাশি আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর কিছুটা ধারনা থাকে তাহলে কিন্তু আপনি খুব সহজেই আপনার সেই ব্লগে প্রচুর পরিমাণে ট্রাফিক বা ভিজিটর আনতে পারবেন। যার মাধ্যমে আপনি কিন্তু আপনার ইনকামের পরিমাণ বহুগুণে বাড়িয়ে ফেলতে পারবেন খুব সহজেই।
৪। ভিডিও দেখে অনলাইনে আয়ঃ
ভিডিও দেখে অনলাইন ইনকাম করার বিষয়টি হয়ত অনেকেই জানেন না জানলেও অনেকে বিশ্বাস করেনা। সত্যি কথা বলতে অনলাইন থেকে ভিডিও দেখে ইনকাম করার বিষয়টি অনেকের কাছে বিশ্বাস যোগ্য না হলেও ঘটনাটি কিন্তু সত্যি। তবে মনে রাখবেন, অনলাইনে অনেক সাইট রয়েছে যারা ভিডিও দেখিয়ে ইনকাম এর কথা বলে কিন্তু এরা স্ক্যাম বা ভূয়া সাইট। যারা আপনাকে দিয়ে ভিডিও দেখাবে কিন্তু পরবর্তীতে কোনো পেমেন্ট করবে না।
সাধারনত এই ধরনের ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্ন ধরনের চটকদারী বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে আপনাকে ভিডিও দেখিয়ে আয় করার ফাঁদে ফেলবে।এ থেকে বাচতে সবসময়ই একটা বিষয় মনে রাখবেন, কখনই কোনো ওয়েবসাইট আপনাকে ভিডিও দেখে খুব বেশি পেমেন্ট করবে না।তাই যখনই দেখবেন কোনো ওয়েবসাইট মাত্রাতিরিক্ত পেমেন্ট করার কথা বলছে কিংবা কোনো চটকদারী বিজ্ঞাপনের কথা বলবে বা খুব বেশি পেমেন্ট করার কথা বলবে বুঝে নিবেন সাইটটি ভুয়া।
৫। ইউটিউবিং করে আয়
বাংলাদেশের অনেক বড় বড় ইউটিউবার আছে। এদের কারো কারো মাসের ইনকাম ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। আপনিও কিন্তু চাইলেই ইউটিউব ভিডিও বানিয়ে ইনকাম করা শুরু করতে পারেন।
এই ভিডিও বানাতে আপনার ক্যামেরা না থাকলেও চলবে। প্রথমে অনেক বড় বড় ইউটিউবার-ই মোবাইল দিয়ে ভিডিও করে শুরু করে তাদের ইউটিউব যাত্রা। তারপরে সফল হওয়ার পরে এখন তারা দামি দামি গেজেট ব্যবহার করে।
আপনার কন্টেন্ট যদি ভালো থাকে, প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে যদি আপনি ভিডিও বানাতে পারেন, তাহলে খুব তাড়াতাড়িই আপনি ভিউয়ার পেয়ে যাবেন।
তবে এক্ষেত্রে একটি ছোট্ট বিষয় টিপস দিয়ে রাখি আপনাদের। আপনারা যদি সত্যিই প্রফেশনালভাবে ইউটিউবে কাজ করতে করতে চান তাহলে ভিডিওর অডিও ও ভিডিও এডিটিং খুবই ভালো ভাবে করতে হবে।
তারপরে সর্বনিম্ন এক হাজার সাবস্ক্রাইবার হয়ে গেলে এবং ন্যূনতম ভিউ টাইম হয়ে গেলে আপনি মানিটাইজেশন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর পরে প্রতিটা ভিডিওতে মানিটাইজেশন একটিভেট করে নিলেই আপনার ইনকাম শুরু হয়ে যাবে।
এছাড়াও বর্তমানে ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়াও আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে স্পন্সারের মাধ্যমেও ইনকাম করতে পারেন। দেখা গেলো কোনো একটা কোম্পানি কোনো একটা পন্যের মার্কেটিং এর জন্য আপনার ভিডিও তে তার ওই পন্য বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য বললো। আপনি এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দিতে সম্মতি প্রকাশ করলে আপনাকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী সে পেমেন্ট করবে।
৬।অ্যাফলিয়িটে র্মাকটেং (Affiliate Marketing) করে আয়
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) বর্তমানে সারা বিশ্বেই অনেক জনপ্রিয় একটি অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও আস্তে আস্তে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এর সংখ্যা বাড়ছে।
এটি অনেক সহজ একটি মাধ্যম। কিন্তু সাধারন মানুষের অনেকেরই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা না থাকার কারনে এই কাজে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করছেনা। আসুন বিষয়টা খুব সহজে বুঝে নেই।
বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার ই-কমার্স (E-Commerce) সাইট রয়েছে। এদের ভেতরে অনেকগুলো আবার সারা বিশ্বেই পন্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে। এইসব ই-কমার্স (E-Commerce) সাইটে প্রত্যেকটাতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) নামে একটি সেকশন রয়েছে।
আপনি সেখানে অ্যাকাউন্ট খুলে খুব সহজেই তাদের মেম্বার হয়ে যেতে পারেন। তারপর আপনার একটা গ্রুপ তৈরি করতে হবে বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে। এরকম গ্রুপ আমাদের প্রতিটি মানুষেরই আছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে।
এখন ওই নির্দিষ্ট ই-কমার্স (E-Commerce) সাইট থেকে আপনি বিভিন্ন পন্যের বিবরন সহ ওই লিঙ্ক কপি করে বিভিন্ন গ্রুপে পাঠাতে হবে। এবার ওখানে থেকে ওই লিঙ্কে ক্লিক করে যদি কেও পন্যটি কিনে তাহলে আপনি সেটার থেকে নির্দিষ্ট পরিমানের একটি কমিশন পাবেন।
এক্ষেত্রে আপনার কমিশনের জন্য কিন্তু পন্যটির দাম বাড়বে না। পন্যটির আসল যে দাম সেটি দিয়ে মানুষ কিনতে পারবে আপনার পাঠানো লিঙ্ক থেকে।
তবে এ ধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং সর্ম্পকেও পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট ধারনা থাকা চাই।
এভাবে অনেক টাকায় ইনকাম করা সম্ভব হয় যদি আপনি ভালো একটি কমিউনিটি তৈরি করে ফেলতে পারেন। তাছাড়া আপনি চাইলে এখান থেকে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমেও ইনকাম করতে পারেন।
এর জন্য আপনার দরকার অনেক গুলো একটিভ ইমেইল। আপনি যদি হাজার খানের একটিভ ইমেইল ম্যানেজ করে ফেলতে পারেন, তাহলেই খুব সহজে এখানে থেকে ভালো অঙ্কের একটি টাকা ইনকাম করে ফেলতে পারেন।
বর্তমানে অ্যামাজন এফিলিয়েশন প্রোগ্রাম (Amazon Affiliation Program) বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৭। ছবি বিক্রি (Sell Photos Online) করে আয়
আমাদের বর্তমান জেনারেশনে স্মার্টফোন নেই এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গণা। অনেকের কাছে আবার বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরাও বিদ্যমান। আপনি চাইলে আপনার এই মোবাইলের মাধ্যমে খুব সহজেই অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
সেক্ষেত্রে আপনাকে শুধু বিভিন্ন আকর্ষণীয় জিনিসের ছবি তুলতে হবে। সেটা আপনি আপনার মোবাইল ফোন দিয়েও তুলতে পারেন আবার ক্যামেরা দিয়েও তুলতে পারেন।
তারপর চাইলে একটু এডিট করে অথবা “র” (Raw) ফাইলই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপলোড করে সেখান থেকে এক একটি ছবির জন্য ৫০ ডলার থেকে শুরু করে ৫০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
আপনি যদি অল্প সল্প ফটো এডিটিং জানেন, তাহলে এক্ষেত্রে অনেক সুবিধা লাভ করতে পারবেন। Photoshop, Illustrator ইত্যাদির মাধ্যমে ছবির আকর্ষণীয়তা অনেক ক্ষেত্রেই জানা বাড়ানো যায়।
অনলাইনে ছবি বিক্রির জন্য অনেক ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন আপনি। তার মধ্যে, Shutterstock, 500px, Envato ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয় এবং সব থেকে বেশি পে করে থাকে ফটোগ্রাফারদেরকে।
ইন্ডিয়ার সন্দিপ মহেশ্বরীর কথা অনেকেই শুনে থাকবেন। এখন প্রত্যেকটা টেকনোলজি বিষয়ক সেমিনার বা স্টেজ সো-তে তিনিই প্রধান অতিথি থাকেন। তিনিই অন্যতম উদাহরন যে ফটোগ্রাফিকে নিজের পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন ।
এই সেক্টরে তিনি ভীষণই সফল একজন মানুষ। তার নিজেরও ছবি বিক্রির একটি ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে দেশ বিদেশের ১০০০ এরও বেশি ফটোগ্রাফার কাজ করে থাকেন।
আপনি এইসব ওয়েবসাইট গুলো তে যে ছবি গুলো বিক্রি করবেন সেগুলো আবার ওই ওয়েবসাইট থেকেই বিভিন্ন মানুষ ক্রয় করে নিবে। এইসব ছবি গ্রাফিক ডিজাইনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। বিভিন্ন বইয়ের কাভারে, ব্যানারে, ফেস্টুনে এইসব ছবি বিক্রি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৮।.অনলাইনে পাঠদানের মাধ্যমে ইনকাম
আমাদের মাঝে অনেকেই আছি যারা পড়াশুনার পাশাপাশি শিক্ষকতার সাথে জরিত। এতে করে মাসে একটা ইনকাম আমাদের হাতে আসে। কিন্তু যুগের বিকাশে এই পড়াশুনা শুধুমাত্র অফলাইনে সিমাবদ্ধ নয় এই বিস্তার দুনিয়া জুরে।অনলাইনে ছাত্র বা ছাত্রি পড়িয়ে মাসে ৩০-৫০হাজার টাকাও আয় করতে পারেন। আমাদের দেশে অনেক অনলাইন স্কুল রয়েছে আপনি তাদের সাইট ভিজিট করে ধারণা নিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার পাঠদান।
৯।অনলাইন রিসেলিং (Online Reselling) করে আয়
অনলাইনে পন্য বিক্রি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বেশ বড় বড় কয়েকটি অনলাইন ব্যবসা রয়েছে। আপনি চাইলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে বড় পর্যায়ে শুরু করতে হবে। আর এতে আপনার পুরো সময়টাই ব্যয় করতে হবে এবং সাথে সাথে আরও অনেক দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেটা ছাত্রজীবনে করা একটি কষ্টকর হয়ে যায়।
সেক্ষেত্রে আপনি অনলাইন রিসেলিং (Online Reselling) করে বেশ ভালো ইনকাম করতে পারেন। অনলাইন রিসেলিং মুলত অনলাইনে পন্য বিক্রির কাজ কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাকে বেশি কিছু করা লাগবেনা।
আপনি শুধু একটি রিসেলিং কোম্পানি (Reselling Company) তে আপনার একাউন্ট খুলবেন এবং এখান থেকে পন্যের ছবি এবং বিবরন নিয়ে আপনি নিজে একটা পেজ খুলে বিক্রি করবেন।
রিসেলিং কোম্পানির কাছে অনেক কম দামে পন্য পাবেন আর ওইগুলা তার থেকে সামান্য বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করে আপনি নিজের লাভ বের করবেন। বেশি কিছু রিসেলিং কোম্পানি (Reselling Company) বাংলাদেশে রয়েছে। এর মধ্যে শপআপ (ShopUp) অন্যতম।
এখানে আপনাকে পন্য বিক্রয় করার জন্য নিজের কোনো পন্য লাগবে না। পন্য যোগাড় থেকে শুরু করে বাকি সব কাজই ওই রিসেলার কোম্পানি করে দিবে।
১০।অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে
বিকাশের মতো অনেকেরই মনে একটি প্রশ্ন থাকে যে মোবাইল দিয়ে অনলাইনে ইনকাম করা যায় কি না। সত্যি কথা বলতে বিকাশের মতোই একদম সহজ করে এক কথায় যদি উত্তর দিতে হয় তাহলে বলবো ‘না’। আপনি মোবাইল দিয়ে অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন না।
উপরে অনলাইন থেকে আয়ের যে বিষয়গুলো সর্ম্পকে আমরা আলোচনা করেছি সেই কাজগুলি করতে গেলে কিন্তু একটি মোবাইলের থেকে একটি কম্পিউটার হলেই আপনার জন্য বেশি ভালো হবে।
আমি বলছি না যে মোবাইল দিয়ে অনলাইন থেকে একদমই আয় করা যাবে না। অনেক বড় বড় ইউটিউবার রয়েছেন যারা শুধুমাত্র মোবাইল দিয়ে ভিডিও করেই আজকে অনেক লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার ও ভিউস পেয়েছেন।
এমনও অনেকে রয়েছেন যারা শুধুমাত্র একটি মোবাইল দিয়েই ফেসবুক একটি পেজ পরিচালনার মাধ্যমে তাদের অনলাইন ব্যবসা দিনকে দিন বড় করেই তুলছেন।
কিন্তু সত্যি কথা বলতে আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই অনলাইন থেকে ভালো আয় করতে চান তাহলে কিন্তু আপনার অবশ্যই একটি ভালো মানের কম্পিউটারের প্রয়োজন পড়বে। নতুবা আপনার পক্ষে প্রফেশনালভাবে অনলাইনে কাজ করাটা অনেকটাই কষ্টকর হয়ে যাবে।
শেষ কথা
অনলাইন ইনকাম (Online Income) বর্তমানে বহুল প্রচলিত একটি বিষয় যা ঘরে বসে ইনকাম এবং নিজেই নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম একটি মাধ্যম। হাজার হাজার বেকার যুবক এখন বসে না থেকে এই পথে নেমেছে। যাহোক, এই ছিলো মূলত আমাদের আজকের আলোচনা।
আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা থেকে শুরু করে অনেক মানুষই বর্তমানে অনলাইন ইনকামের সাথে জড়িত। বাংলাদেশের অনলাইন ইনকাম সাইটগুলোর মধ্যেও অনেক ভালো সাইট রয়েছে যেগুলো আজকাল বেশ ভালো করছে।
একটু কষ্ট করে কিছুটা রির্সাচ করলেই আপনি এ সর্ম্পকে আরো বিস্তারিত জানতে পারবনে। মোটামুটি এই হচ্ছে অনলাইন ইনকাম (Online Income) এর হাতেখড়ি বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা।
আমরা এখানে অনলাইন আয় এর সেরা ১০টি উপায় এবং বিভিন্ন অনলাইন ইনকাম টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবার পালা আপনার যা আপনি কোন পদ্ধতিতে কাজ করতে চাচ্ছেন।
আশা করি এই আর্টিকেলটিতে আলোচিত সকল বিষয়ই আপনারা সম্পূর্ণভাবে বুঝেছেন। তারপরও যদি কোনো বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে সেটি কমেন্ট বাক্সে জানাতে ভুলবেন না আর এই আর্টিকেলটি যদি আপনার একটুও উপকার ক্রে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না। শুভ হোক আপনার অনলাইন যাত্রা। ধন্যবাদ।
Post a Comment